শ্রীমঙ্গলে দেশীয় জাল নোট, ভারতীয় রুপিসহ আটক -০১
আল-আমিন মিয়া, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়া জাল নোট ব্যবসার হোতা যুগেন্দ্র মল্লিককে দেশি-বিদেশি বিপুল পরিমাণ জাল টাকা সহ গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার জুগেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে দীর্ঘদিন যাবত জাল নোটের ব্যবসায় জড়িত। দেশের নানা উৎস থেকে জাল নোট সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে আসছিল।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জাল নোট উদ্ধার ও এর সাথে জড়িত এক ব্যক্তিকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা জানান, গত ২১ মে বুধবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের রুস্তমপুর গ্রামে যুগেন্দ্র মল্লিকের বাড়িতে অভিযান চালায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ মাহবুবুর রহমান মোল্লা'র নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
অভিযানে যুগেন্দ্র মল্লিকের ঘরের বিভিন্ন স্থানে জাল নোটের খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি করতে থাকে পুলিশ। একপর্যায়ে তাঁর দেয়া তথ্যমতে বাড়ির গোয়াল ঘরের খড়ের নিচে দেশি-বিদেশি জাল নোট দেখতে পায় পুলিশ। এসময় সেখান থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ২শত টাকার দেশি জাল নোট ও ৩ হাজার ৯শত ভারতীয় রুপি সহ প্রায় ৩ লাখ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় যুগেন্দ্র মল্লিককে। গ্রেফতার যুগেন্দ্র মল্লিক ওই গ্রামের মৃত : দেবেন্দ্র মল্লিক এর ছেলে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখানে উদ্ধারকৃত জাল নোট প্রদর্শন ও গ্রেফতারকৃত যুগেন্দ্র মল্লিককে হাজির করা হয়।
উদ্ধারকৃত জাল নোটের মধ্যে রয়েছে ১ হাজার টাকার নোট ১শত ৫৫ টি, ৫শত টাকার নোট ২শত টি, ২শত টাকার ১শত ১১ টি এবং ভারতীয় ৫শত টাকার ৫ টি ও ২শত টাকার ৭ টি নোট।
পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেফতার জুগেন্দ্র মল্লিক আসন্ন কুরবানী ঈদকে কেন্দ্র করে পশুর হাটে ছাড়ার লক্ষ্যে সে জাল টাকাগুলো নিয়ে এসেছিল। তার বিরুদ্ধে এর আগেও জাল টাকার মামলা হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীমঙ্গল থেকে তাকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার জাল বাংলাদেশী নোট এবং ১৪ লাখ টাকার ভারতীয় জাল রূপীসহ র্যাব গ্রেফতার করে।
এ দিকে গ্রেফতার জুগেন্দ্র মল্লিক এর বিরুদ্ধে বুধবারের জাল নোট উদ্ধারের ঘটনায় শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার সহযোগীদের গ্রেফতারেও কাজ করছে পুলিশ ।
আল-আমিন মিয়া
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২২ মে ২০২৫
০১৬৪৮-৭৫৫১১১
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১,২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চারপাশে রয়েছে সবুজে ঘেরা পাহাড়ি বন। বড় বড় গাছপালা, বাঁশঝাড়, লতা-গুল্ম এবং ঝরনাধারা মিলে উদ্যানটি এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। ঘন সবুজ বনের ভিতর দিয়ে পায়ে হাঁটার সরু রাস্তা পর্যটকদের মনোরম অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এই বন মনে হয় এক স্বপ্নময় রাজ্য।
জীববৈচিত্র্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির উভচর এবং ২০ প্রজাতির সরীসৃপ। উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, মাকাক বানর, কাঠবিড়ালীসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। এছাড়া হরিয়াল, ময়না, কাঠঠোকরা, শ্যামা, বুলবুলি সহ বিভিন্ন রকমের পাখির কাকলি বনটিকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
পর্যটন ও ভ্রমণ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। এখানে ভ্রমণপিপাসুরা গাইডের সাহায্যে বনের বিভিন্ন ট্রেইল ঘুরে দেখতে পারেন। স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে। ট্রেনলাইন দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন, সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা, পাখিদের গান—এসব মিলে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বনের ভিতর দিয়ে ট্রেনলাইন চলে যাওয়া, পর্যটকদের অসচেতনতা, অবৈধ বন উজাড় ইত্যাদি কারণে উদ্যানের প্রাণী ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
উপসংহার:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের একটি অনন্য নিদর্শন। এই উদ্যানের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রকৃতির অপার মহিমা অনুভব করতে হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিত।