শাহজাহান কমর! আপনার মৃত্যু, আমার স্মৃতিচারণ।
আপনি এত দ্রুত চলে যাবেন, চিন্তায় ছিল না। জীবন এমনই। বেঁচে থাকাটাই আশ্চর্যের। চলে যাওয়াটাই বাস্তব।
আজ থেকে আপনি সারাজীবনের জন্য অবসরে চলে গেলেন! যে অবসরে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না।
লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ছড়া, কবিতা, আবৃত্তি, ছোটগল্প, গল্প, উপন্যাসের কোথায় ছিলেন না আপনি?
সবখানে সর্বত্র আপনার অবাধ ও সুষ্ঠু বিচরণ ছিলো।
মানবহিতৈষীমুলক কাজ, পরোপকার ছিলো আপনার মুল সম্বল,
জানি যা লিখছি, আপনারে নিয়ে যতই লিখি না কেন?
তারপরও আপনার সম্বন্ধে কম বলা হবে কম লেখা হবে।
"আমার কাঁচা হাতের লেখা আপনার মতো মানুষকে নিয়ে কতটাই বা লিখতে পারবো, সেইটা হয়তো জানিনা।"
তবুও আমাকে লিখতেই হবে। বলতেই হবে। তাই আমি লিখছি..✍️
আপনি সম্রাট শাহজাহানের মতো ধরায় এসেছিলেন গেলেন ও সম্রাটের মতো চিরবিদায় নিয়ে, আপনার তুলনা শুধু আপনি নিজেই!
কি ছিলো না আপনার?
নাম, যশ খ্যাতি, অন্ততঃ এগুলো ব্যবহার করে শুধু ঐ ঢাকা শহরে বসে শত শত কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন।
বিত্ত বৈভবে নিজেরে ফুলিয়ে নিতে পারতেন।
একটু অনৈতিক পথে চললে,(যা বর্তমান যুগে চলে, প্যাশন হয়ে গেছে) যা আজকাল সচরাচর অনেকেই করে।
"দৈনিক আমাদের সময়" পত্রিকার মফস্বল বিভাগে থাকার সুবাদে গোটা দেশে শুধুমাত্র আমাদের সময় পত্রিকার সিন্ডিকেট বানিয়ে আরো অনেক কিছু করতে পারতেন।
৮টি বিভাগীয় ব্যুরো চিফ ছিলো আপনার অধীনে।
কত উপঢৌকন, কতশত খাম আসতো আপনার কাছে।
কতজনে কতরকমের কত ধরনের উপহার চাইতো আপনাকে দিতে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে কতজনে কত ধরনের উপঢৌকন দিয়ে আপনার সন্তুষ্টির চেষ্টা করে যেত!
শুধুমাত্র আপনারে খুশি রাখতে। আপনার নেক নজরে থাকবার জন্য।
সমস্তকিছু আপনি সবিনয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে যেতেন।
নীতি নৈতিকতার ক্ষেত্রে আপনি ছিলেন সংগ্রামী আপোষহীন, অটল,অবিচল এক মহীরুহ।
লোভ লালসা আপনারে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি।
"জিরো টলারেন্স" ছিলো আপনার এসব দিকে।
সুক্ষ্ম নজর ছিলো আপনার এসবের প্রতি,
যাতে কারণে অকারণ যেন এসব আপনারে টাচ করতে না পারে।
"বাংলাদেশে কোন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু অবধি আপনি ছিলেন।
টানা ২০ বছর কোন জাতীয় পত্রিকার মফস্বল সম্পাদক পদে এইরকম কেউ সততা নিষ্ঠা ন্যায়পরায়ণতা, নীতি নৈতিকতা এবং আদর্শিক সততা নিয়ে চাকরি করে গেছেন।
তা কিন্তু, বিরল। বিরল ঘটনা। রেকর্ড ও বটে।
একমাত্র আপনার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে।"
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তই ছিলো আপনার সে কমিটমেন্ট। আপনার মতো মহামানবরা এমনই হয়, এমনই তারা জগত সংসারে সবার মাঝে বাসা গেঁড়ে রয়।
একসময় এমনও হয় সময় আসে বেলা ফুরাবার।
কাউকে না কাউকে স্থান করে দিয়ে যেতে হয়।
আপনি ও সেটাই করে গেলেন।
আপনার প্রয়াণে ভাষা আজ হারিয়ে গেছে। কি বোর্ড চলছে না।
মস্তিকে খামচেঁ ধরেছে মস্তিষ্কের কোষ ছোট্ট নিউরনেরা।
মাথার স্টেমসেল কার্যত কাজ করছে না।
তবুও মন চাইছে এই অধম আপনারে নিয়ে দু'কলম লিখুক!
মানুষ পড়ুক, জানুক, আপনার সম্বন্ধে..
জৈন্তাবার্তা, আজকের সিলেট, বাংলাবাজার পত্রিকা হয়ে দৈনিক আমাদের সময়ে এসে আপনি থামলেন।
জীবনের তিন চতুর্থাংশ সময় শুধু কর্মজীবন আর পত্রিকার মাঝে, সংবাদের মাঝে নিরবে নিভৃতে কাটিয়ে দিলেন।
কত নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ ছিলেন আপনি।
যারা আপনার সংস্পর্শে গেছে, শুধুই তারা জানে।
কখনো চাইতেন না আপনি পাদপ্রদীপের আলোয় আসুক আপনার নাম।
আড়ালে অন্তরালে কত সাংবাদিক কে গড়ে গেছেন।
"সাংবাদিক গড়ার কারিগর ছিলেন।"
নীরবে মানুষকে আপনার বেতনের টাকা থেকে সহায়তা করে যেতেন।সহায়তা দিতেন।
শুধুমাত্র ঐ বেতনটাই ছিলো আপনার সম্বল।
ঢাকা উত্তর শাহাজাহান পুরের শহীদ বাগের বাসায় যারা গেছে।
যারা আপনারে স্বচক্ষে দেখেছে।
তারাই বুঝতে পেরেছে আপনারে।
কত অনাড়ম্বর পুর্ণ লাইফ লিড করে গেছেন আপনি।
অথচ, কত হাই প্রোফাইল চাকরি ছিলো আপনার।
চাইলে অভিজাতশ্রেণীর মতো নিজের এ ছোট্ট জীবন ওউন করতে পারতেন।
সমাজের উচ্চপদস্থ সরকারি বেসরকারি আমলা, সচিব, অফিসার, এম,পি মন্ত্রী মিনিস্টার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বড় বড় সম্পাদক সহ সবার পরিচিত ছিলেন।
সবাই আপনারে চিনতো, আপনিও সবাইকে চিনতেন। সবার সঙ্গে জানাশোনা ছিলো।
পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্বে থাকার কারণে সমাজের হাই, মিড,লো ক্লাস সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে আপনার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সখ্যতা ছিলো।
কোনসময় কখনো আপনি মাত্রা ক্রস করতে চাইতেন না।
মোটকথা তার সব কন্ট্রোলিং আপনার মেমোরিতে থাকতো।
ভোররাতে যখন আপনার মৃত্যু সংবাদ শুনি, তখন নিজের কান'কেই বিশ্বাস করতে পারি নাই।
আলো ফোঁটার সাথে সাথে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় আপনি নেই!
তখন কি যে যন্ত্রণা যাতনা বিষে ছারখার হয়েছি।
সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
আপনার এই যে পালকি চড়ে মহা প্রস্থান চিরদিনের জন্য। সেটার সাক্ষী হতে চললাম।
''আপনার চিরবিদায়ের মিছিলে শরীক হয়েছি।
ভাঙ্গা মন নিয়ে। ভগ্ন হৃদয়ে। বুকের মাঝে জমে থাকা কষ্টে।
তা কি করে আপনারে বোঝাই।''
সাংসারিক ভাবে ছিলেন আপনি ও আপনারা নিঃসন্তান, সে কষ্ট কাউকে বুঝতে দেন নাই। নীরবে সয়ে গেছেন।
আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা,অগাধ বিশ্বাস রেখে হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছিলেন।
সবসময় আপনার মুখে হাসি লেগে থাকতো।
নিরহংকারী সাদামাঠা জীবন-যাপন ছিলো আপনার ভীষণ প্রিয়।
মানুষকে খুব সহজে ইন্সপায়ার করতে পারতেন আপনি।
নিমিষেই বশে আনতেন। সহজ সরল সারমর্মিক মৃদু ভাষণে।
সেকারণে আমার জানামতে আপনার কোন শত্রু ছিলো না।
মিত্র ছাড়া, শুভাকাঙ্ক্ষী শুভানুধ্যায়ী ছাড়া।
বলুনতো, এরকম জীবন কয়জনে পায়, কয়জনই বা গড়তে পারে?
আমার স্পষ্ট মনে আছে ২০১২সালে প্রবাস থেকে বাড়ীতে আসার পরপরই ঠিক এর দু'দিন পর পেটের পীড়াজনিত কারণে আপনার ঢাকাস্থ বাসায় উঠি।
৬দিন ছিলাম। ডাক্তার, পরীক্ষা, রিপোর্ট সহ সবকিছু করিয়ে সহজ ট্রিটমেন্ট নিয়ে আসার নিমিত্তে।
তো এই ছ'দিন আমি খুব কাছ থেকে আপনারে দেখেছি।
সকালে ১১টার দিকে আপনার ব্যাগ নিয়ে বাসার নীচে আমাদের সময় পত্রিকা অফিসের গাড়ীতে চড়তেন
ফিরতেন রাত ১২ টা ১টার দিকে।
বাসায় এসে ওজু করে প্রথমেই ৪ রাকাত নামাজ।
তারপর দ্রুত খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওষুধ খেয়ে দ্রুতই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেন।
রাত ৩টার সময় ওঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ফুফু ও আমারে নিয়ে।
পরে আবার কিছুক্ষণের জন্য রেষ্টে যাওয়া।
ফজরের সময় আবার উঠে তার আগে আবারো নামাজ।
তারপর ফজরের নামাজ পড়ে অল্প একটু ঘুম।
সকাল ৮টায় উঠে ফুফুর সঙ্গে লাল গমের রুটি বানানো সঙ্গে আপনার পছন্দের সবজি ভাজিঁ।
তারপরে খাওয়া শেষ করে প্রথম আলো, যুগান্তর, সমকাল, আমাদের সময়ে চোখ বুলিয়ে নেয়া।
তারপর গোসল,কাপড়ে ইস্ত্রি করা, অফিসে যাওয়ার জন্য আপনার কি যে ব্যাস্ততা!
ফুফুর দৌড়াদৌড়ি আপনার জন্য অফিসে লাঞ্চ করার জন্য মধ্যাহ্নের টিফিন তৈরী করে দেয়া।
সময় ও দ্রুতই শেষ হত।
তারপর ৩তলা থেকে সিড়ি বেয়ে দ্রুত নেমে নীচে অপেক্ষমাণ পত্রিকা অফিসের গাড়ীর সিটে নিজেকে সেঁটে দিয়ে দ্রুত অফিসে যাবার প্রাণান্তকর চেষ্টা।অফিস পৌঁছে ফোন দেয়া।
কাজের ফাঁকে ফুফুকে ফোন দিয়ে আমার খবর নেয়া আমি এন্ডোস্কোপি করাতে মেডিনোভা যাচ্ছি তো?
"ফুফু আমারে নিয়ে বেরোচ্ছেন তো?"
দেশসেরা গ্যাস্ট্রোএন্টারলজিস্ট ডাক্তার ইকবাল মোর্শেদ কবির কে বলে রাখা।
"কবে ঢাকা খিদমাহ্ হাসপাতালে যাবো।"
রিপোর্ট আনছি কি না?
ডাক্তার কি বলেছে?
কাজের ফাঁকে এত এত খোঁজ খবর, এত এত যত্নআত্তি আজ সব হৃদয়ে উঁকি দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
এলাকায় আসার আগে শ্যমলীর সিটে বসে ফোন দিয়ে বলতেন মিজান আমরা ঢাকা হতে বড়লেখায় আসছি।
কাউন্টারে আসিও।
যেদিন বলতেন না, সেদিন গ্রামতলার বাসায় এসে ফোন দিয়ে বলতেন মিজান বাড়ীতে আইছি।
আসিও।
এই যে আমাদের প্রতি আপনার এত দরদ, মায়া মমতা স্নেহ আন্তরিকতা এসব ভুলি কি করে!
বড়লেখায় আসার পর কি যে ব্যাস্ততা, জন্মস্থান কালাউরাতে একবার যেতেই হবে।
মা, বাবা ভাই বোন ইষ্টিকুটুম সহ আত্মীয় স্বজনদের কবর জেয়ারত করতেই হবে।
তারপর নিজ জন্মস্থানের সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় এটা আপনার রুটিন হয়ে থাকতো।
আবার বড়লেখা ফিরে সাংবাদিক ইকবাল ভাই ও এডভোকেট সাংবাদিক গোপাল বাবুকে নিয়ে উনাদের সঙ্গে আড্ডা শেষ করে গাজিটেকায় আবার শশুর শাশুড়ী ও আমার প্রয়াত পিতা মরহুম জনাব, আব্দুল মান্নান (মেম্বার) আমার মরহুমা মাতার কবর জেয়ারত আপনার করতেই হবে।
মোটামুটি সব ভালো কাজে, সওয়াবের কাজে, সামাজিক কাজে যথাসাধ্য আপনাকে আঠার মতো লেগে থাকতেই হবে।
এটাই ছিলো আপনার একমাত্র পণ।
'মানুষের তরে সমাজের তরে নিজের জীবন যৌবনকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন আপনি।
নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য ভাবার সময় আপনার কই!'
সে সময়ই ছিলো না।
সারাজীবন পত্রিকা অফিসের ডেস্কে বসে সারাদেশের সংবাদ আপনি নিজে ছাপিয়েছেন আজ আপনার মৃত্যু সংবাদ বিভিন্ন খবরের পাতায়।
এত মায়া ভালোবাসার আপনার প্রেয়সী প্রাণপ্রিয় প্রিয়তমা স্ত্রী'র সঙ্গে সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করতে ও সময় নেন নি।
দীর্ঘ ৩ দশকের সাংসারিক স্মৃতির বন্ধন। কত সুখ স্মৃতি, হাসিকান্না, আনন্দ, ঝগড়া, খুনসুটি, দুঃখ বেদনা, এগুলো আজ সব পিছনে পড়ে গেলো।
অফিসের কলিগদের সঙ্গে এতকালের দুঃখ সুখের স্মৃতি একে অন্যে ভাগ করে নেওয়ার মুহুর্ত গুলো কেবল স্মৃতির খাঁচায় বন্দী হয়ে রইলো।
আমরা যারা আত্মীয় স্বজন গুণগ্রাহী, "আজ আমরা সবাই থমকে গেছি' নির্বাক থ হয়ে গেছি"
আপনার বিরহের ক্ষণে"
আজ সবকিছুর যবনিকা টেনে সব সম্পর্ককে ছিন্ন করে সব কর্মব্যস্ততাকে একপাশে ঠেলে দিয়ে আপনি পরকালের পথে চলে গেছেন।
'ভাবতেই বুক খাক খাক করে।
এত কষ্ট কেন আপনার বিরহ বেলায়?
মৃত্যুর দূত নিয়ে গেছে দূর, একটু একটু করে আপনায়।
এত যন্ত্রণা কেন আপনিহীনায়!
চিরবিদায়!
সাংবাদিক শাহজাহান কমর।
এত কষ্ট কেন আপনার বিরহ বিচ্ছেদের বেলায়,
সত্যি- ই জড়িয়েছিলে কোন এক অপূর্ব মায়া মমতায়
ভাবতেই বুকে কাঁপন ধরে চোখে জল এসে যায়!
৭ভাই ৩ বোনের মাঝে আপনার অবস্থান ছিলো ৬ষ্ঠতম।
গ্রামতলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে লোকে লোকারণ্য আপনার প্রথম জানাজা শেষে আপনারে নিয়া যখন আমরা আপনার জন্মস্থান কালাউরায় যাই..
সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরী হইছিলো।
"আপনার জন্মস্থান বলে কথা। সেখানকার মাটির সন্তান আপনি।"
এশার সালাতের পর রাত ৯টায় আপনার প্রিয় কালাউরা সোনাতুলা মাঠে যখন আপনার ২ জানাজা অনুষ্ঠিত হইলো, তখন মানুষের ক্রন্দনে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
এতবড় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছিল।
মানুষের ঢল নেমেছিলো।
আপনারে শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য সর্বসাধারণের উপস্থিতি আমাদের আরেকবার ভাবিয়ে তুলেছিলো।
আপনার স্থায়ী ঠিকানা পারিবারিক গোরস্থানে যখন "এক মুঠো" মাটি দিতে যাই,
তখন মানুষের প্রচন্ড ভিড়, তা এত বেশী ছিলো যে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিলো বেশ খানিকটা সময়।
চিরদিনের জন্য যখন আপনার কবরে মাটি দিই,
তখন বুকের মাঝে কি অনুভুতি তৈরী হয়েছিলো, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
মাটি দেবার পর পরম করুণাময়ের দরবারে সবার সঙ্গে আপনার জন্য হাত তুলি,
তিনি যেন আপনার দুনিয়াবী ভালো কাজগুলোর প্রতিদান হিসাবে আপনার কবরকে প্রশস্ত করেন।
মনোহর করে দেন।
চিরনিদ্রায় শায়িত আপনার সংযোগ যেন জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে করে নেন।
আপনার ইহকালের যাবতীয় গুনাহ খাতাগুলোকে মোচন করে দেন।
আমিন, বলে যখন বেরিয়ে আসি আর মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে মনের অজান্তে,
বিদায় হে চির সাংবাদিক শাহজাহান কমর।
জানি, দুনিয়ার মারকাজে আপনার সঙ্গে আর দেখা হবে না।
দেখা হোক, আপনার সঙ্গে আল্লাহর ইচ্ছায় জান্নাতের সিঁড়িতে।
ইনশাআল্লাহ সেদিন উষ্ণতার আলিঙ্গনে জাপটে ধরে নেবো এই বুকেতে..।
শুধু ভাল থাকুন, অনন্তলোকে!
পরিশেষে বলছি..
আপনি হয়তো একটু বেশীই অভিমানী ছিলেন___
যার কারণে শুধু একটাই আক্ষেপ..
"শত চেষ্টা করে ও আপনারে ফেরানো গেলো না কিছুতেই! "
লেখক (প্রয়াত সাংবাদিক শাহজাহান কমর'র জৈষ্ঠ্য সমন্দিকের বড় পুত্র— ভাইপো।)
মিজানুর রহমান
সমাজকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১,২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চারপাশে রয়েছে সবুজে ঘেরা পাহাড়ি বন। বড় বড় গাছপালা, বাঁশঝাড়, লতা-গুল্ম এবং ঝরনাধারা মিলে উদ্যানটি এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। ঘন সবুজ বনের ভিতর দিয়ে পায়ে হাঁটার সরু রাস্তা পর্যটকদের মনোরম অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এই বন মনে হয় এক স্বপ্নময় রাজ্য।
জীববৈচিত্র্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির উভচর এবং ২০ প্রজাতির সরীসৃপ। উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, মাকাক বানর, কাঠবিড়ালীসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। এছাড়া হরিয়াল, ময়না, কাঠঠোকরা, শ্যামা, বুলবুলি সহ বিভিন্ন রকমের পাখির কাকলি বনটিকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
পর্যটন ও ভ্রমণ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। এখানে ভ্রমণপিপাসুরা গাইডের সাহায্যে বনের বিভিন্ন ট্রেইল ঘুরে দেখতে পারেন। স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে। ট্রেনলাইন দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন, সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা, পাখিদের গান—এসব মিলে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বনের ভিতর দিয়ে ট্রেনলাইন চলে যাওয়া, পর্যটকদের অসচেতনতা, অবৈধ বন উজাড় ইত্যাদি কারণে উদ্যানের প্রাণী ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
উপসংহার:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের একটি অনন্য নিদর্শন। এই উদ্যানের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রকৃতির অপার মহিমা অনুভব করতে হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিত।