ঈদের ছুটিতে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে পর্যটকের ঢল
হানিফ পারভেজ,বড়লেখা প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে বছর জুড়ে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। তবে ঈদ উৎসবে পর্যটকদের সমাগম একটু বৃদ্ধি পায়। এতে মুখরিত হয় পর্যটন এলাকা। হাসি ফুঠে ওঠে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে।
এবারও ঈদ উল ফিতরের ছুটিতে মাধবকুন্ডে পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
বনবিভাগ ও স্থানীয় সুএে জানা যায়,ঈদের প্রথম দিন থেকে দ্বিতীয় দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে প্রায় ৫ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। প্রতিদিন আশপাশের উপজেলার মানুষ ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলা এবং বিদেশী পর্যটকরা ভিড় করছেন মাধবকুন্ডে। এতে বেচাকেনা ভালো হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটে ওঠেছে।
সরেজমিনে ঈদের পরের দিন দুপুরে দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবসহ নানা বয়সী মানুষ বাস, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় যানবাহনে করে মাধবকুন্ডে বেড়াতে আসছেন। মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের নির্মিত গাড়ি রাখার টার্মিনালে জায়গা না হওয়ায় আগত পর্যটকরা সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করেছেন। এতে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় দোকানগুলোতে জমজমাট বিকিকিনি হচ্ছে।
জলপ্রপাতের পানিতে নানা বয়সী মানুষ সাঁতার কাটছেন। হই চই করছেন। কেউ কেউ প্রিয়জনদের ছবি ক্যামেরাবন্ধি করছেন।
পর্যটকের নিরাপত্তায় পুলিশ সবসময় কাজ করছে। আগত পর্যটকরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাতে পাহাড় চূড়ায় না উঠতে পারে, সেজন্য পুলিশ সর্তক আছে।
বনবিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের এক রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকরা মাধবকুন্ডে বেড়াতে আসছেন। প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা সবসময় নজর রাখছি, যাতে পর্যটকদের কোন অসুবিধা না হয়।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১,২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চারপাশে রয়েছে সবুজে ঘেরা পাহাড়ি বন। বড় বড় গাছপালা, বাঁশঝাড়, লতা-গুল্ম এবং ঝরনাধারা মিলে উদ্যানটি এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। ঘন সবুজ বনের ভিতর দিয়ে পায়ে হাঁটার সরু রাস্তা পর্যটকদের মনোরম অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এই বন মনে হয় এক স্বপ্নময় রাজ্য।
জীববৈচিত্র্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির উভচর এবং ২০ প্রজাতির সরীসৃপ। উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, মাকাক বানর, কাঠবিড়ালীসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। এছাড়া হরিয়াল, ময়না, কাঠঠোকরা, শ্যামা, বুলবুলি সহ বিভিন্ন রকমের পাখির কাকলি বনটিকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
পর্যটন ও ভ্রমণ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। এখানে ভ্রমণপিপাসুরা গাইডের সাহায্যে বনের বিভিন্ন ট্রেইল ঘুরে দেখতে পারেন। স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে। ট্রেনলাইন দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন, সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা, পাখিদের গান—এসব মিলে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বনের ভিতর দিয়ে ট্রেনলাইন চলে যাওয়া, পর্যটকদের অসচেতনতা, অবৈধ বন উজাড় ইত্যাদি কারণে উদ্যানের প্রাণী ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
উপসংহার:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের একটি অনন্য নিদর্শন। এই উদ্যানের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রকৃতির অপার মহিমা অনুভব করতে হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিত।