বড়লেখায় বিষপানে তরুণীর আত্মহত্যা
হানিফ পারভেজ,বড়লেখা (মৌলভীবাজার) ---
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের রাঙ্গাউটি গ্রামের অনি বিশ্বাস (১৮) নামে এক তরুণী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার (২৪ মার্চ) রাত ৮টার দিকে তিনি বিষ পান করেন।
পরিবারের সদস্যদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে যান এবং অনি বিশ্বাসকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে দ্রুত তাকে জুড়ী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক থাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত তরুণীর বাবা জুতিস বিশ্বাস বলেন, আমরা হঠাৎ তার ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পাই। গিয়ে দেখি, সে বিষ খেয়ে শুয়ে আছে এবং নড়াচড়া করছে। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এদিকে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রেম ঘটিত কারণে অনি বিশ্বাস আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে তবে পুলিশের তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
জুড়ী সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. আবু নোমান সিদ্দিকী বলেন, রাত ৮টা ৩০ মিনিটে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি, তিনি মৃত অবস্থায় রয়েছেন। তার মুখে বিষের গন্ধ পাওয়া গেছে, যা বিষপানের প্রমাণ দেয়।
জুড়ী থানার এসআই সুধীপ্ত সূত্রধর বলেন, সে বিষপানে মারা গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবুল কাশেম সরকার দুপুরে বলেন, মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার মর্গে পাঠানো হয়েছে। আত্নহত্যার কোন সত্যতা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল। এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১,২৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের চারপাশে রয়েছে সবুজে ঘেরা পাহাড়ি বন। বড় বড় গাছপালা, বাঁশঝাড়, লতা-গুল্ম এবং ঝরনাধারা মিলে উদ্যানটি এক অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। ঘন সবুজ বনের ভিতর দিয়ে পায়ে হাঁটার সরু রাস্তা পর্যটকদের মনোরম অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা এই বন মনে হয় এক স্বপ্নময় রাজ্য।
জীববৈচিত্র্য:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৬ প্রজাতির উভচর এবং ২০ প্রজাতির সরীসৃপ। উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, মাকাক বানর, কাঠবিড়ালীসহ বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। এছাড়া হরিয়াল, ময়না, কাঠঠোকরা, শ্যামা, বুলবুলি সহ বিভিন্ন রকমের পাখির কাকলি বনটিকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
পর্যটন ও ভ্রমণ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। এখানে ভ্রমণপিপাসুরা গাইডের সাহায্যে বনের বিভিন্ন ট্রেইল ঘুরে দেখতে পারেন। স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে। ট্রেনলাইন দিয়ে ছুটে চলা ট্রেন, সবুজ বনের মধ্যে দিয়ে হাঁটা, পাখিদের গান—এসব মিলে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বনের ভিতর দিয়ে ট্রেনলাইন চলে যাওয়া, পর্যটকদের অসচেতনতা, অবৈধ বন উজাড় ইত্যাদি কারণে উদ্যানের প্রাণী ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
উপসংহার:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের একটি অনন্য নিদর্শন। এই উদ্যানের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রকৃতির অপার মহিমা অনুভব করতে হলে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একবার হলেও ভ্রমণ করা উচিত।